নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, যদি কেউ গাছ কাটে, আমি তার হাত কেটে দেব। মেয়রের এমন বক্তব্যের তোয়াক্কাই করছেন না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলো। উন্নয়ন কাজের নামে উত্তর সিটিতেই চলছে গাছ কাটার মহোৎসব।
অন্যদিকে রাজধানীর উষ্ণ পরিবেশে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে ডিএনসিসির পাড়া-মহল্লায় দুই লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগের কথা বলছেন মেয়র আতিক।
রাজধানীর মহাখালীর আমতলী থেকে গুলশান-১ পর্যন্ত সড়কটি বীর উত্তম এ কে খন্দকার সড়ক নামে পরিচিত। এই সড়কে প্রবেশ করতেই এখন কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তাঁর কারণ হলো- কিছুদিন আগেও এই সড়কের বিভাজকে থাকা হরেক রকম গাছ সবুজ ডানা বিছিয়ে থাকা ডাল-পাতা চোখে পড়তো। কিন্তু সড়কটির বিভাজক উন্নয়নের নামে ছায়াদানকারী শতাধিক গাছ ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। তাই ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
স্থানীয়রা বলছেন, পরিকল্পিত ভাবেই গাছগুলো কাটা হয়েছে। সড়কটির ৬০টির বেশি গাছ কাটা হয়েছে। কাটা পড়া গাছগুলোর অধিকাংশই বড়। অন্যদিকে বর্তমানে কাজ চলমান থাকায় গাছগুলোর গোড়ার অংশের মাটি সরাতে হচ্ছে। কোনো কোনো গাছের শিকড়সহ মূল কাটা পড়ছে। ফলে গাছগুলো হেলে পড়ার অজুহাত দেখিয়ে কাটা হচ্ছে। উন্নয়নকাজ যত এগিয়ে যাচ্ছে, তত বেশি গাছ কাটা পড়ছে। সব মিলিয়ে ১০০ এর বেশি গাছ কাটা পড়েছে বলে মন্তব্য স্থানীয়দের। আরও বেশ কিছু গাছ কাটা পড়বে।
স্থানীয়রা আরও বলছেন, গাছগুলোর অধিকাংশ কাটা হয়েছে রাতের আঁধারে। অপসারণ করাও হয় দ্রুত সময়ে। এমন ভাবে কাটা হয় কেউ দেখতেই পায়না। হটাৎ দেখা যায় যায়গা ফাঁকা।
এ বিষয়ে স্থানীয় আনিসুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘যারা গাছ কাটবেন মেয়র মহোদয় তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন। আমরা ভেবেছিলাম পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। কিন্তু এখন আমরা দেখছি এগুলো খালি কথা। তাঁর কারণ কিছু দিন আগে মেয়র মহাখালী কাঁচা বাজারে ডিজিটাল ডিসপ্লে উদ্বোধন করতে এসে আমতলী গুলশান-১ সড়কের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করে গেছেন। তখনও গাছ কাটা ছিল।’
একটি গনমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, মহাখালী-গুলশান রোডের মধ্যবর্তী ডিভাইডারে প্রায় ৩০০টি গাছ ছিল। মহাখালী-গুলশান সড়কে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ও হাসপাতালের সামনের সড়কের ডিভাইডারে চলমান সংস্কারকাজের কারণে অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ডিভাইডারের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে ৩০টি গাছের গুঁড়ি।
ঐ গনমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়কটির বিভাজক বা আইল্যান্ডের উন্নয়নকাজ চলছে। মহাখালী আমতলী অংশ থেকে শুরু করে গুলশান লিংক রোড পর্যন্ত স্থানভেদে কাটা পড়েছে গাছ। কোথাও কোথাও আবার গাছ রেখেই কাজ চলছে। ব্র্যাক সেন্টারের অদূরে পারটেক্স গ্রুপের অফিসের সামনের সড়ক বিভাজকে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছটি কাটা হয়েছে গত সপ্তাহে। স্থানটিতে থাকা গাছের গোড়ালির তাজা অংশই তা বলে দিচ্ছে। কিছু গাছ কাটা হয়েছে বেশ কিছু দিন আগে। কাটা পড়া গাছের গোড়ালি থেকে বের হয়েছে সবুজ শাখা-প্রশাখা। কিছু কিছু গাছের শিকড় কাটা পড়ায় পাতা শুকিয়ে গেছে। এছাড়া সড়ক বিভাজক বা আইল্যান্ডের খোঁড়াখুঁড়িতে হেলে পড়তেও দেখা গেছে বেশ কিছু গাছ। সেগুলো সরাতেও দেখা গেছে শ্রমিকদের।
বনজদ্রব্য পরিবহন (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০১১ এর ৫ ধারায় বলা আছে সড়ক ও জনপথ, বাঁধ, রেলপথ, সংযোগ সড়ক ইত্যাদি ভূমি থেকে বনজ সম্পদ আহরণ, অপসারণ বা পরিবহন করতে হলে বন বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন হয়। তবে সেই আইনের তোয়াক্কা করেনি ডিএনসিসি। অনুমতি না নিয়ে বন বিভাগের অফিসের সামনের গাছ কাটলেও ডিএনসিসির এ কাজে বাধা দেয়নি বন বিভাগ।
ঠিকাদার জনি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এ সড়কে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করছে। গাছ কাটার বিষয়ে জনি এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর দিলীপ জানিয়েছেন, মিডিয়ান স্ট্রিপ নির্মাণের সময় যে গাছগুলো ‘মরে গিয়েছিল’ সেগুলো ডিএনসিসি তুলে নিয়েছিল যেন সেগুলো রাস্তায় না পড়ে। আর তারা কোনো গাছ কাটেনি বলেও তিনি দাবি করেন।
এদিকে রাজধানীর মিরপুরের টেকনিক্যাল ক্রসিংয়ে সড়ক বিভাজক নির্মাণের সময় গাছ কাটার কারণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস এম রহমান ইন্টারন্যাশনালকে আগামী এক বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছে ডিএনসিসি। এ ছাড়া দায়িত্বে অবহেলা ও কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করায় সংশ্লিষ্ট কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএনসিসির দুজন উপসহকারী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই দুজন উপসহকারী প্রকৌশলী হচ্ছেন মো. সুরুজ্জামান ও সুজা উদ্দিন।